বুথফেরৎ সমীক্ষা ভুয়া : প্রিয়াঙ্কা গান্ধী

কলকাতা থেকে ফিরে, ইয়াকুব আলী মিঠু:  কলকাতায় ‘নো রিফিউজাল’ লেখা সাদা রঙের  ট‌্যাক্সি চালান শরণ ঝা। গত ২২ মে ‘র তপ্ত দুপুরে ট‌্যাক্সিতেই চলতে চলতে নির্বাচনের বুথ ফেরৎ সমীক্ষা নিয়ে কথা হচ্ছিল তাঁর সাথে। শরণ বলছিলেন, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে মোদীই আবার ক্ষমতায় আসবেন। তাঁর আক্ষেপ, দেশে এবার কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ভাল হতো। ভারতের মানুষকে কংগ্রেসের চাইতে ভাল আর কেউ বোঝেনা। বুথ ফেরৎ মানুষের সমীক্ষা নিয়ে যে উত্তেজনা চলছে সমগ্র ভারতজুড়ে সে প্রসঙ্গ তুলতেই শরণ বললেন, সাধারণ মানুষ সাহসের সাথে সঠিক তথ‌্য দিচ্ছেন, এমনটা নাও হতে পারে। তাই ২৩ মে ফল ঘোষনা পর্যন্ত অপেক্ষা করাই ভাল হবে।

কলকাতার রাস্তায়, চায়ের দোকানের আড্ডায় কিম্বা বাসে ট্রামে বাড়ী ফেরা মানুষের মুখে মুখে ছিল নির্বাচন প্রসঙ্গ। পাশাপাশি ইভিএম নিয়েও তাদের মনে সংশয়ের দানা বাঁধতে শুরু করেছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, ইভিএম মেশিন খুব চতুরতার সাথে গড়বড় করা ক্ষমতাসীন বিজেপির পক্ষে অসম্ভব নয়।

উত্তর প্রদেশের জনগনকে চাঙ্গা রাখতে কংগ্রেসনেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী তাদের হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বুথ ফেরৎ সমীক্ষা বিশ্বাস করবেন না, এটা ভুয়া। তারপরও সারা ভারতে এবারের নির্বাচন বিশেষ করে পশ্বিমবঙ্গে গভীর ছায়া ফেলেছে। এর অন‌্যতম কারন মমতা ব‌্যানার্জী। লোকসভা নির্বাচন নিয়ে দুই রকম স্বপ্ন ছিল মমতার। এক. তাঁর দল এবার পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনই জিতবে। দুই. প্রধানমন্ত্রী হওয়ার। মমতার ধারণা ছিল, এবার রাজ্যপাট থেকে বিরোধীরা একটি আসনও পাবে না। আর দিল্লিতে গঠিত হবে জনগণের সরকার। আর সেই সরকার গড়ার প্রধান কারিগর হবেন মমতা নিজে। আর এই লক্ষ্যে মমতার দলের নেতা থেকে মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কেরা একযোগে মাঠে নেমে স্লোগান তুলেছিলেন, ভারত এবার বাঙালি প্রধানমন্ত্রী পাবে। মমতার হিসাব ছিল, এবার বিজেপি উত্তর প্রদেশ, বিহার, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, ওডিশা, অন্ধ্র প্রদেশে তেমন আসন পাবে না। ফলে, সরকার গড়ার সুযোগ আসবে মমতার প্রস্তাবিত ‘ইউনাইটেড ইন্ডিয়া’ জোটের। এই জোটের কোনো শরিক দল ৪২ আসন পাবে না। সেই নিরিখে শীর্ষে থাকবে মমতার দল তৃণমূল। ফলে, এই ইউনাইটেড ইন্ডিয়া সরকার গড়তে গেলে বড় দল হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ আসবে মমতার।

কিন্তু বুথ ফেরৎ সমীক্ষা সব উল্টাপাল্টা করে দিচ্ছে। গতকাল ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বুথফেরৎ সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়, বিপুল ভোটে আবারও ভারতে সরকারে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। এবিপি নিউজ ও নিয়েলসনের বুথফেরত সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে মমতা পাবেন ২৪টি আসন। বিজেপি ১৬টি। আর কংগ্রেস দুটি আসন। বাম দল পাচ্ছে না একটি আসনও। টাইমস নাও ও ভিএমআর তাদের সমীক্ষায় বলছে, মমতা পাবেন ২৮টি আসন। বিজেপি ১১টি, কংগ্রেস ২টি এবং বাম দল ১টি আসন। রিপাবলিক-সি-ভোটারের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২৯টি আসন পাবে তৃণমূল, বিজেপি পাবে ১১টি এবং কংগ্রেস পাবে ২টি আসন। সিএমএক্স বলেছে, তৃণমূল পাবে ২৬টি, বিজেপি ১৪টি এবং কংগ্রেস পাবে ২টি আসন। ইন্ডিয়া টুডে বলেছে, তৃণমূল পেতে পারে ১৯ থেকে ২২ আসন, বিজেপি ১৯ থেকে ২৩ এবং কংগ্রেস শূন্য থেকে একটি আসন পেতে পারে। টুডেজ চাণক্য বলেছে, মমতা পাবেন ২৩ আসন, বিজপি ১৮ এবং কংগ্রেস ১টি আসন। এ ছাড়া নিউজ ১৮-আইপিএসওএস বলেছে , তৃণমূল পাবে ৩৬ থেকে ৩৮ আসন, বিজেপি ৩ থেকে ৫ আসন এবং কংগ্রেস শূন্য থেকে একটি আসন। একমাত্র টাইমস নাও-ভিএমআর ছাড়া সব সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, বাম দল এবার কোনো আসন পাচ্ছে না। টাইমস নাও বলেছে, বামেদের ভাগ্যে একটি আসন জুটতে পারে।

তবে বুথফেরৎ সমীক্ষাকে প্রত্যাখ্যান করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘মোদি হারছেনই। আমি বুথফেরত সমীক্ষা বিশ্বাস করি না।’

শেষ পর্যন্ত রায় কোন দিকে যাচ্ছে তা জানতে ২৩ মে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

বিজয়১৯৭১/২২ মে ২০১৯