কে এই মামুন?

মাছ ব্যবসায়ী নানার বাড়ি সোয়ারী ঘাট। সেই বাড়িতেই ১৯৮২ সালে ওয়াজউদ্দিন মামুনের জন্ম। তবে তাঁর পৈত্রিক নিবাস ৫নং হাজী আবদুল রশীদ লেন, বংশাল। এই বংশালেই মামুনের বেড়ে ওঠা এবং স্থায়ীভাবে বসবাস। পিতা, পিতামহ, প্রো-পিতামহ, ধারাবাহিকভাবে সবাই ছিলেন লেদ মেশিনে কাজ করা দক্ষ কারিগর বা মিস্ত্রি। অর্থাৎ মা কিংবা বাবা, কোনো পক্ষ থেকেই শিল্প চর্চার প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণা তিনি পাননি।

তবু তিনি শিল্পচর্চাকে জীবনের একমাত্র ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছেন; জীবিকা হিসেবে নয়। জীবিকা নির্বাহের সুযোগ সমৃদ্ধ যে শিল্প ধারাগুলো তাঁর আশে-পাশে বিরাজ করছিলো সেগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যাওয়ার মতো দক্ষতা তাঁর ছিলো না। হয়তো বা আগ্রহও তেমন ছিলো না। কুড়িয়ে পাওয়া কাগজের ওপর তিন রঙা বলপেন দিয়ে রঙিন ছবি আঁকবার নেশা তাঁকে পেয়ে বসে ২০০২-২০০৩ সাল থেকে। এক সময় তাঁর পরিচয় হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চিত্রশিল্পী আজহারুল হক মাখনের সাথে। প্রায় একই সময়ে খোঁজ পেয়ে যান ছবির হাট আর চারুকলার।

ছবির হাটের উন্মুক্ত প্রদর্শনী এবং সর্বসাধারণের অংশ নেয়ার সুযোগ ওঁর আগ্রহ এবং আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সৃষ্টির নেশায় ক্রমাগত রচিত হয়ে যাওয়া শিল্পকর্মগুলো পাগলামীর ফসল হিসেবে গণ্য হতে থাকে পরিবার আর নিকটজনদের কাছে। কেননা এতে অর্থের জলাঞ্জলী আছে, আয় নেই। এক সময় মামুনের কাছেও এই চর্চা উভয় অর্থে অর্থহীন বোধ হতে থাকে। ধীরে ধীরে তিনি হতাশাগ্রস্থ ও নিভৃতচারী হয়ে ওঠেন। সম্ভবত: পারিবারিক জীবনও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন (এ বিষয়ে তার কাছ থেকে বিস্তারিত কিছুই জানা যায়নি)। জীবন প্রবাহ থেমে যাওয়ার উপক্রম হলেও ওঁর ছবি আঁকা থেমে থাকে না।

২০১৭ সালে কোন এক অপরাহ্নে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানী তরুন শিল্পী শাহাবুদ্দীন ময়লা রঙমাখা কাগজের একটা বান্ডিল নিয়ে চারুকলায় এনে শিক্ষকদের কক্ষে ঢুকে এই শিল্পীর বিষয়ে আমাকে অবগত করে। ঠিক কি কারণে এই কাজগুলো মামুন চারুকলার কাছে এনে ফেলে দিয়ে গেলেন তা চারুকলার শিক্ষকদের কৌতুহলের কারণ হয়ে ওঠে।

এরপর খুঁজে আনা হয় মামুনকে। বিস্তারিত জানবার চেষ্টা করে যেটুকু জানা যায়, মামুন ছবি আঁকেন; কিন্তু কেন এই অভাব-তাড়িত অবস্থাতেও আঁকেন উত্তর তাঁর জানা নেই। সম্ভবত: শেষবারের মতো ছবির কদর কতটুকু তা পরখ করার জন্যই চারুকলার সামনে ফেলে যাওয়া। আর তাই চারুকলার শিক্ষকগন তাঁকে ডেকে নিয়ে আসায় সে আনন্দে আত্মহারা। এর বেশি কিছু তাঁর চাওয়া নেই।

২৪ আগষ্ট থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোহম্মদপুরের কলাকেন্দ্রে এই গুণী শিল্পীর শিল্পকর্ম প্রদর্শীত হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন অধ্যাপক নাসির হুসাইন। ঠিকানা- ১/১১ ইকবাল রোড, (তৃতীয় তলা) মোহাম্মদপুর, ঢাকা ১২০৭।

আরো পড়ুন: ঝকঝকে গহনা প্রতিদিন

আরো পড়ুন: রোগের ঘোরে একাধিক যৌন সম্পর্কে স্ত্রী, কি করবেন স্বামী?