মাদকমুক্ত নেতৃত্ব মানে মাদকমুক্ত দেশ : মেয়র

আওয়ামীলীগের তৃণমুল পর্যায়ের সবগুলো কমিটিতে নেতা নির্বাচনের আগে অবশষ্যই তাদের রক্ত পরীক্ষা করে নেয়া উচিৎ। রক্তে মাদকের আলামত পাওয়া গেলে তাকে নেতৃত্বদানে অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। আর এটা করা গেলে সমগ্র বাংলাদেশ হয়ে উঠবে মাদকমুক্ত সোনার বাংলা।

কথাগুলো বলছিলেন আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচিত সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল্লাহ আল পাঠান। পৌরসভার মোস্তফা কামাল চত্বরে রায়গঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মেয়রের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইয়াকুব আলী মিঠূ।

বিজয়১৯৭১: আপনি কি মেয়র হিসেবে সফল?

পাঠান: দেখুন, আমার কাজ হলো এলাকার সমস্যাগুলো চিহ্বিত করে সেগুলো যথাযত সমাধান করা। সমস্যার সমাধান ও এলাকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমার চেষ্টার কোন ঘাটতি নেই। আমি প্রচুর খাটতে পারি। আমি সফল নাকি ব্যর্থ দিন শেষে তা মুল্যায়নের দায়িত্ব আমার এলাকার ভোটারদের।

বিজয়১৯৭১: এলাকার উন্নয়নে আপনার চালিকা শক্তি কি?

পাঠান: অবশ্যই যুব সমাজ। এরা সব সময় আমার ভাল কাজের সাথে থাকে। কোথাও কোন অসংগতি দেখা দিলে নিঃশঙ্কচে আমাকে বলতে পারে। এরা আছে বলেই এত প্রতিবন্ধকতা সত্বেও আমি এলাকায় উন্নয়নমুল কাজগুলো এগিয়ে নিতে পারছি।

বিজয়১৯৭১: যুব সমাজের জন্য আপনার পরিকল্পনা কি।

পাঠান: পরিকল্পনা তো অনেক। এলাকায় মাদকমুক্ত শিক্ষিত যুব সমাজ গড়ে তোলা প্রধান লক্ষ্য। শিক্ষিত বেকার যুবকদের কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারলে তারা হতাশা থেকে বেড়িয়ে আসবে। তাহলে এলাকার যেমন উন্নয়ন হবে তেমনি দেশেরও উন্নয়ন হবে। পৌর এলাকায় শিল্পায়ন বৃদ্ধি করার জন্য শিল্প নগরী গড়ে তোলার উদ্দ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে ৩৭ একর জমি বরাদ্দের কাজ চলছে। এটা করা গেলে ব্যপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে।

কিন্তু পরিকল্পনা আর বাস্তবতা ভিন্ন। রায়গঞ্জ একটা দ্বিতিয় সারির পৌরসভা। বছরে বরাদ্দ্য পাই মাত্র ৭০ লাখ টাকা। সাবেক মেয়র যিনি ছিলেন তিনি এই ছোট পৌরসভায় ১৯ জন ষ্টাফ নিয়োগ দিয়ে গেছেন। তাদের বেতন বাবদ বাজেটের একটা বড় অংক বেড়িয়ে যায়। তাই ইচ্ছে থাকলেও সম্বন্নিত উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

বিজয়১৯৭১: তাহলে কি এলাকায় কোন উন্নয়ন হচ্ছে না?

পাঠান: অবশ্যই হচ্ছে, কিন্তু বলছি যে, যতটুকু করার ইচ্ছে ততটুকু করতে পারছি না। মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ ন হ ম মোস্তফা কামাল রায়গঞ্জ পৌরসভার একজন সুহৃদ। তাঁর আনকুল্যেই বড় বড় কিছু উন্নয়ন কাজে হাত দিতে পেরেছি।

বিজয়১৯৭১: কি কি উন্নয়ন কাজ চলছে?

পাঠান: এলাকার রাস্তাঘাটের ব্যপক উন্নয়ন হয়েছে। আপনি নিজে সরেজমিনে গিয়েও দেখতে পারেন। এক কিলো মিটার পুবেই পৌর কবরস্থান। শত বছরের অবহেলায় জরাজীর্ণ অবস্থায় পরে ছিল, এলাকার যুব সমাজকে সাথে নিয়ে আমি এর আধুনিকায়ন করেছি।

এর বাইরে, খেলাধুলার মান উন্নয়নে স্টেডিয়াম, নদীর দুই পাড়ের উন্নয়ন এগুলোর কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে।

বিজয়১৯৭১: আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, দুধমাতা কার্ডসহ অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধাগুলো নিজের আত্নীয়ের মধ্যে বিতরনে করেছেন।

পাঠান: দেখুন, কেউ কিন্তু বলছে না দুর্ণিতি হয়েছে, বলছে স্বজনপ্রীতি হয়েছে। এলাকায় সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের সুবিধা পাওয়ার যারা যোগ্য তাদেরকে্ই এই সুবিধা দেয়া হয়েছে, এর মধ্যে কেউ যদি আমার আত্নীয় হয় তাহলে তো দোষের কিছু নেই।

রায়গঞ্জ পৌরসভায় যাওয়ার রাস্তা

বিজয়১৯৭১: আপনার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ, কৃষিজমি নষ্ট করে তৈরী করা পৌর ভবনের রাস্তার জন্য আপনি সাধারণের কৃষিজমি জোড় করে নিচ্ছেন।

পাঠান: আমার আগে যিনি মেয়র ছিলেন তিনিই এই পৌরভবনটি নির্মাণ করেছেন। কাজেই এটার দায়-দায়িত্ব তাঁর। সরকারী খরচে ভবন করা হয়েছে অথচ সেখানে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। রাস্তা তৈরী করার জন্য কৃষি জমি ব্যবহারের কোন বিকল্পও নেই। এখন রাস্তা নির্মাণের জন্য যে ব্যয় দরকার তার বরাদ্দ নেই। যদি বরাদ্দ পাই তবে অবশ্য কৃষকদের উপযুক্ত ক্ষতিপুরন দেয়া হবে।

রায়গঞ্জ পৌরসভা

বিজয়১৯৭১: এলাকাবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি?

পাঠান: আমি এলাকার সব রাস্তায় এবং সরকারী পতিত জায়গায় নিম ও জলপাই গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। এই দুটো গাছ মানুষকে অসুখ বিসুখ থেকে দুরে রাখবে।

বিজয়১৯৭১: এলাকায় মাদকের বিস্তার রোধে কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

পাঠান: ইতোমধ্যে মাদকের বিস্তার অনেক কমেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষকে নিয়ে সামাজিক সচেতনা গড়ে তুলেছি। আগামী জুলাই মাসের মধ্যে শতভাগ মাদকমুক্ত ঘোষনা করতে পারব ইনশাল্লাহ।

বিজয়১৯৭১: মাদকমুক্ত নেতৃত্বের কথা বলছিলেন?

পাঠান: হ্যাঁ, গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় রাজনীতিতে যে সকল কমিটি হচ্ছে সেখানে নেতা নির্বাচনের আগে আমি তাদের রক্ত পরীক্ষার কথা বলে আসছি। আওয়ামীলীগের তৃণমুল পর্যায়ের সবগুলো কমিটিতে নেতা নির্বাচনের আগে অবশষ্যই তাদের রক্ত পরীক্ষা করে নেয়া উচিৎ। রক্তে মাদকের আলামত পাওয়া গেলে তাকে নেতৃত্বদানে অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। আর এটা করা গেলে সমগ্র বাংলাদেশ হয়ে উঠবে মাদকমুক্ত সোনার বাংলা। এটা হলে ভাল হতো।

বিজয়১৯৭১: আপনাকে যদি একদিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী করা হয় তবে কোন কোন কাজগুলো করতে চান?

পাঠান: জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন যোগ্য প্রধানমন্ত্রী। তিনি দেশের উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এটা তাঁর কাজ, আমি প্রধানমন্ত্রী হতে চাই না। আপনাকে ধন্যবাদ।

বিজয়১৯৭১: আপনাকেও ধন্যবাদ।