ফুটবলার মাসুরা পারভীনের দিনরাত্রী

মাসুরা পারভীন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অন্যতম ষ্টাইকার। গত বছর মাসুরা পারভীনের করা একমাত্র গোলে নেপালকে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ।

মাসুরার বাবা ভূমিহীন রজব আলীর সহায়-সম্বল বলতে তেমন কিছুই নেই। সাতক্ষীরা পৌরসভার ইটাগাছা পূর্বপাড়ায় একটি জরাজীর্ণ ভাঙাচোরা দোচালা ঘর ভাড়া করে পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। পেশায় ভ্যান চালক হলেও অসুস্থ থাকেন প্রায় সারা বছর। শহরের বাঙালের মোড়ে ভ্যানে করে তরমুজ বিক্রি করে নিজের ওষুধের টাকা জোগাড় করেন তিনি।

রজব আলীর এই নিত্য অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা মাসুরার। পারিবারিক অনটন সত্বেও অধ্যাবসায় আর অদম্য মনোভাব দিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন জাতীয় ফুটবল দলে।

মাসুরা পারভীনের বাবা ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে রোদ বৃষ্টি মাথায় করে ওই ভাঙা ঘরই তাদের আশ্রয়স্থল। বড় মেয়ে মাসুরা জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়। মেজ মেয়ে সুরাইয়া পারভীন অষ্টম শ্রেণি এবং ছোট মেয়ে সুমাইয়া পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ঘরভাড়া, সংসারের বেশিরভাগ ব্যয় ও বোনদের পড়ার খরচ যোগায় মাসুরা। সামনে ঈদ। এখনো কারো জন্য কিছুই কিনতে পারেননি তিনি।

তিনি আরও জানান, তার নিজের কোনো জমি নেই। ২০১৬ সালে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে তাকে ডেকে খাসজমি বরাদ্দ দেওয়ার জন্য তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দীনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তৎকালীন জেলা প্রশাসক শহরতলীর খেজুরডাঙি এলাকায় সরকারি খাসজমি বরাদ্দের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে আইনি জটিলতায় তা বন্ধ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা পৌরসভা কাউন্সিলর শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন কালু ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, মাসুরা পারভীন দেশের সম্পদ। অথচ তার পরিবার ভূমিহীন। সাতক্ষীরা পৌরসভার পক্ষ থেকে এই পরিবারটিকে যাতে একটি বাড়ি তৈরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় সে বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি। পাশাপাশি পৌরসভার পক্ষ থেকে দেন সহযোগিতার আশ্বাস।

উল্লেখ্য, গত বছর মাসুরা পারভীনের করা একমাত্র গোলে নেপালকে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। জাতীয় ফুটবল দলের পাশাপাশি কাবাডি জাতীয় দলেও খেলেছেন তিনি। এছাড়া, বাংলাদেশ গেমসে কয়েকটি খেলায় অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতা আছে কৃতি এই অ্যাথলেটের।

২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ গেমসে ফুটবলের পাশাপাশি হ্যান্ডবল, ভলিবল, কাবাডি ও অ্যাথলেটিকসে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিল মাসুরা।